কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি :
আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শ্রীগুরু সঙ্ঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আশ্রমের কোষাধ্যক্ষ বিপুল বরন ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আশ্রম কতৃপক্ষ। তাকে বরখাস্ত করায় সাধারণ সম্পাদককে দেখিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন তিনি। তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীগুরু সঙ্ঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্ত। গত শুক্রবার রাতে পিরোজপুরের কাউখালীতে স্হাপিত কেন্দ্রীয় শ্রীগুরু সঙ্ঘ আশ্রমের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কোষাধ্যক্ষ বিপুল বরন ঘোষের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সর্বসাধারনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শ্রী গুরু সঙ্ঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আশ্রমের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিগত দুই মেয়াদের কোষাধ্যক্ষ পদধারী বিপুল বরন ঘোষের বিরুদ্ধে আশ্রমের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করা। আশ্রমের এফডিআরের টাকা আত্মসাত করা। ভক্ত শিষ্যদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া আচরণ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিকে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থেও ব্যবহার করা সহ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। সভায় অভিযোগ সমূহ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সাধারণ ভক্ত শিষ্য ও গুরু ভ্রাতাগনের জনরোষের মুখে কোষাধ্যক্ষ বিপুল ঘোষ এক পর্যায়ে আশ্রম ত্যাগ করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার এক দিন পর শ্রীগুরু সংঘ আশ্রমের কাউখালী উপজেলা শাখা কমিটির সভা শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে শাখা কমিটির সদস্য পদ থেকে বিপুল বরন ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আশ্রমের ভক্ত শিষ্যরা অভিযোগ করেন, যখনই শ্রী গুরু আশ্রমের কমিটি গঠন হয় তখন বিপুল বরন ঘোষ তার পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে একটি তথাকথিত নির্বাচন কমিশন গঠন করে পকেট কমিটি উপহার দিয়ে থাকেন। এতে তার অনুসারীর বেশিরভাগ স্থান পায়। তাদের সমর্থনে সে প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এরপর সে সকলের সম্মতিতে গঠনতান্ত্রিক নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটিতে যখন তখন তিনি সদস্য সংখ্যা কমানো ও বাড়ানো করেন। এবারের কমিটি গঠনেও সে গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে ৭১ সদস্যের পরিবর্তে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে নিজের দল ভারী করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।শ্রী গুরু সঙ্ঘ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্ত বলেন, আশ্রমের কোষাধ্যক্ষ বিপুল বরন ঘোষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আশ্রমের ভক্ত গুরু শিষ্যরা বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করলে গত শুক্রবার রাতে এনিয়ে আশ্রমে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হলে উপস্থিত বিভিন্ন শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ভক্তবৃন্দের দাবির মুখে তাকে সদস্য পদসহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তাকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যহতি দেয়ায় সে আমাকে দেখিয়ে দিবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। তখন উপস্থিত ভক্ত শিষ্যদের জনরোষের মুখে সে আশ্রম থেকে চলে যায়। তার বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক অনিয়ম গুলো তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শ্রীগুরু সঙ্ঘ আশ্রমের কাউখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ মন্ডল বলেন, শ্রীগুরু সঙ্ঘ কেন্দ্রীয় আশ্রমের কাউখালী উপজেলা শাখা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য বিপুল বরন ঘোষকে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে গত শনিবার সকল সদস্যদের সম্মতিতে সংগঠন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত বিপুল বরন ঘোষ বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি সার্থনেষি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।