বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী গ্রামে “উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের”নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমি দখল করে কুদ্দুস হাওলাদার নামে স্থাণীয় এক প্রভাবশালী সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন বলে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।ওই পুকুর পাড়ের চারপাশে গাছ লাগিয়ে সেখানে “বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবন আদর্শ অধ্যায়ন বিশ্ববিদ্যালয়” নামে একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।জানা গেছে, আমতলী উপজেলার উত্তর গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে স্থাপিত হয়। একই সালের ১৪ আগস্ট ৩৬০৮ নং দলিলমূলে ফকিরখালী মৌজায় ২১৬৩ ও ২১৬৪ নং দাগ থেকে দাতা হিসেবে আঃ জব্বার মিয়া, আঃ লতিফ মিয়া ও আঃ মতিন মিয়া ৬৪ শতাংশ জমি ওই স্কুলের নামে দান করেন। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি খাতায় স্কুলের ৬৪ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ ছিল। যা স্কুলের পক্ষ থেকে ভূমি অফিসে ওই পরিমাণ জমির খাজনাও পরিশোধ করা হয়। দলিলে উল্লখিত ওই নির্ধারিত দাগের জমির মধ্যেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও জমিদাতা এবং তাদের ওয়ারিশরা চালাকি করে নির্ধারিত জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা না করে এক কিলোমিটার উত্তরে গোজখালী-কলাগাছিয়া পাকা সড়কের পশ্চিম পাশে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা ও স্কুলের ভবন নির্মাণ করেন। যা এতোদিন পর্যন্ত গোপন ছিলো।সম্প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নুরুন্নাহার নীরু’র মধ্যে পারিবারিক কলহ ও ঝামেলার সৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যালয়ের জমি দখলদারদের ষড়যন্ত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিস তাদের দু’জনকে ওই স্কুল থেকে অন্যাত্র বদলীর পর বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল। এরপরেই সামনে চলে আসে স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার কুদ্দুস হাওলাদার কর্তৃক স্কুলের জমি দখল করে সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ ও নবীজীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টানানোর বিষয়টি। তখন স্থাণীয়দের মধ্যেও জানাজানি হয়ে যায় উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্ধারিত স্থানে (জমিতে) প্রতিষ্ঠা ও ভবন নির্মাণ না করে অন্য জমিতে করার বিষয়টিও।স্থানীয় খাদিজা আক্তার, হারুন মিয়া ও খোরর্শেদ প্যাদা জানান, উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্ধারিত স্থানে প্রতিষ্ঠা ও ভবন নির্মাণ না করে অন্য জমিতে ভবন স্থাপন করে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থাণীয়দের অভিযোগ জমিদাতা ও বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব আঃ জব্বার মিয়া, লতিফ মিয়া ও মতিন মিয়ার পরামর্শে দখলদার কুদ্দুুস হাওলাদার স্কুলের জমি দখল করে সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ ও নবীজীর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়েছেন।স্কুলের জমিদাতা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আঃ জব্বার মিয়া দলিলে উল্লেখিত জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ভবনটি নির্মিত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ভবন নির্মিত হয়েছে ওই জমিও ওয়ারিশসূত্রে আমাদের। আমরা পারিবারিকভাবে সিন্ধান্ত নিয়ে আমাদের দানকৃত জমির পরিবর্তে যেখানে এখন স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ওই জমিতে ভবন তুলে সেখানে স্কুলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত করছি।
অপর জমিদাতা ও ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আঃ মতিন মিয়া বলেন, স্কুলের নামে দান করা রেজিষ্ট্রি দলিলে উল্লেখিত দাগের জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি এটা সত্যি। তবে এখন যে জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাও আমাদের পারিবারিক জমি। স্কুলের দলিলে উল্লেখিত ৬৪ শতাংশ জমি আমাদের একই বংশের আঃ কুদ্দুস হাওলাদারের দখলে থাকায় সেখানে তিনি পুকুর কেটে মাছ চাষ ও ‘বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবন আদর্শ অধ্যায়ন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়েছেন।উত্তর গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য ডেপুটেশনে বদলী হওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল এবং নির্দিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ না হওয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দিলে জমিদাতারা আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করে অন্যাত্র বদলী করিয়েছে।দখলদার আঃ কুদ্দুস হাওলাদার পুকুর কেটে মাছ চাষ ও নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই স্কুলের কোন জমি দখল করিনি। স্কুলে দানকৃত জমি আমার জমির পিছনে বিলের মধ্যে রয়েছে।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউল আলম নির্ধারিত জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ভবনটি নির্মিত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়ে বিদ্যালয়ের জমি দখল করা হয়েছে। জমি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, স্কুলটি পরিদর্শন করে জায়গা উদ্ধারে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।